লক্ষ্মীপুরে ১৩ বছরেও হয়নি ৫টি ইউনিয়ন নির্বাচন

লক্ষ্মীপুর সদরের ৫টি ইউনিয়ন পরিষদে গত ১৩ বছরেও হয়নি নির্বাচন। পৌরসভার সঙ্গে সীমানা সংক্রান্ত বিরোধের জেড়ে আটকে আছে এ ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। দীর্ঘ সময় নির্বাচন না হওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও চলছেন এখন দায়সারাভাবে। এতে এসব ইউনিয়নের অবকাঠামো উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বাসিন্দারা। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ আর হতাশা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আটকে আছে সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদি, দালাল বাজার, চররুহীতা, লাহারকান্দি ও বাঙ্গাখা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এসব ইউনিয়নে সবশেষ ভোট হয়েছে ২০১১ সালের ২৭ শে জুন।

লক্ষ্মীপুর সদর পৌরসভা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পৌরসভার চার পাশের ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কিছু অংশ কেটে নতুন ৩টি ওয়ার্ড গঠন করে ২০১৫ সালের ২৫ মে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। এরপর থেকে শুরু হয় নানা জটিলতা। যদিও ২০১৬ সালের ২৫ মে বর্ধিত ৩টি ওয়ার্ডসহ মোট ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা নির্বাচন হয়। সেই সময় আদালত কর্তৃক ইউনিয়ন পরিষদগুলোর সীমানা নির্ধারণ মামলা খারিজ করে দিলেও এসব ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষ থেকে সংক্ষুব্ধরা আবারও আদালতে গেলে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারী তাদের পক্ষে রায় আসে। কিন্তু পৌরসভার আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট গেজেট বাতিলের আদেশ স্থগিত করলে নির্বাচন কমিশন ২০২২ সালে পূর্বের সম্প্রসারিত ওয়ার্ডগুলোসহ পৌরসভার নির্বাচন করে। এরপরও নানা অজুহাতে আটকে আছে ওই ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন।

চররুহীতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী বলেন, আমাদের ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড থেকে কিছু অংশ অযোক্তিকভাবে লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। ওই গেজেটের আলোকেই ২০১৬ সালের ২৫ মে নির্বাচন কমিশন বর্ধিত তিনটি ওয়ার্ডসহ ১৫টি ওয়ার্ডে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার নির্বাচন করে। এর প্রেক্ষিতে চররুহীতা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সংক্ষুব্ধরা হাইকোর্টে মামলা করে। এ অবস্থায় পৌরসভার গেজেট বাতিল পূর্বক কর্তনকৃত ওয়ার্ডগুলোর অংশ পুনঃরুদ্ধার করে ইউপি নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।

বাঙ্গাখা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী আনোয়ার হোসেন কাজন বলেন, লক্ষ্মীপুর পৌরসভা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাঙ্গাখা ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে তিন হাজার ভোটার কেটে নিয়ে পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর প্রেক্ষিতে আমরা হাইকোর্টে যাই। হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকায় নির্বাচন হচ্ছে না। তিন হাজার ভোটার কমে যাওয়ায় সরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। তবে হাইকোর্ট মামলা খারিজ করে দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, খারিজের বিষয়ে এখনও লিখিত কোনো চিঠি তারা পাননি।

এদিকে দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মীর শাহ আলম বলেন, ২০১৪ সালে এসে আমাদের ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কিছু লো-ল্যান্ড পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে। এর বিরুদ্ধে ইউনিয়নের ওইসব ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আপত্তি জানিয়ে হাইকোর্টের স্মরণাপন্ন হন। এমতাবস্থায় ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি পৌরসভার ওই গেজেট বাতিলের আদেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু পৌরসভার আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই মাসের জন্য গেজেট বাতিলের আদেশ স্থগিত করলে নির্বাচন কমিশন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করে। তিনি পৌরসভার এ নির্বাচনকে অবৈধ দাবি করে বলেন, পৌরকর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে হাইকোর্টের দেয়া আগের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলও করা হয়নি। এ অবস্থায় ঝুলে আছে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন না হওয়ায় নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এলাকার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নেও ভাটা পড়ে আছে। জনপ্রতিনিধিরাও কাজ করছেন দায়সারাভাবে। এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেয়ার সময়ও পান না তারা।

দালাল বাজার ইউনিয়নের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আবু ছিদ্দিক ও সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘসময় ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে সীমানা জটিলতার দোহাই দিয়ে নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছে জনপ্রতিনিধিরা। অথচ বর্ধিত তিনটি ওয়ার্ডসহ দুই দুই বার লক্ষ্মীপুর পৌরসভা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, সীমানা জটিলতা থাকলে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা নির্বাচন হলো কীভাবে?

এদিকে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সীমান্তবর্তী ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করা নিয়ে আইনগত কোনো জটিলতা নেই। ইতোমধ্যে ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন ওয়ার্ড বিভাজন করে পুনর্গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওইসব ইউনিয়নে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours