রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ উপশম হাসপাতালের ৪ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

মোঃ তামজিদ হোসেন রুবেল

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভার উপশম জেনারেল হাসপাতাল (প্রাঃ) এ ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় তিন সন্তানের জননী ফাতেমা বেগম (৩৫) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে চার ডাক্তারের  বিরুদ্ধে মামলা নিতে সংশি¬ষ্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
অভিযুক্ত চিকিৎসকরা হলেন, রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ও গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাজমুল হক, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার গুনময় পোদ্দার, উপশম জেনারেল হসপিটালের চেয়ারম্যান মায়া বেগম ও ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) জসিম উদ্দিন।
রবিবার (৩০ জুলাই) বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী অঞ্চল রামগঞ্জ আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন এ নির্দেশ দেন। মৃত ফাতেমা বেগমের স্বামী মোঃ মনর আলী আদালতে এ অভিযোগ দায়ের করেন। মোঃ মনর আলী উপজেলার পানপাড়া গ্রামের দক্ষিণ হাজীপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।
আজ সোমবার বাদীর আইনজীবী মো. রেহানুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অচেতন (অ্যানেস্থেসিয়া) না করেই ভিকটিমের অস্ত্রোপচার (সিজার) করা হয়। এতে বাদীর স্ত্রী মারা যায়। এ ঘটনায় মোঃ মনর আলী আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাটি আমলে নিয়ে বিচারক রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
ফাতেমা আক্তারের স্বামী মনর আলী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের ৪ তারিখ মঙ্গলবার তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তারকে রামগঞ্জ বাইপাস সড়কের উপশম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে হসপিটালের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন জানান তার স্ত্রীকে সিজার করাতে হবে।
বিকাল সাড়ে ৪টায় উপশম জেনারেল হাসপাতালের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন আমার থেকে কিছু সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় আমার স্ত্রীকে। কিছুক্ষণ পরে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ও গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাজমুল হক, রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার গুনময় পোদ্দার উপশম হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করেন। এসময় আমি ও আমার স্ত্রী’র আত্মীয়স্বজনরা অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে অবস্থান করি। অপারেশন চলাকালীন সময়ে আমার স্ত্রীর চিৎকার আমরা বাহিরে থেকে শুনতে পাই।
কিছুক্ষণ পরে আমার স্ত্রী’র সিজার অপারেশন শেষে ডাক্তার নাজমুল হক জানান, আমার একটি কন্যা সন্তান হয়েছে। তারপর আমার স্ত্রীকে বেডে নেয়ার সময় দেখি আমার স্ত্রীর জ্ঞান রয়েছে এবং সে কাঁপছে। আমার স্ত্রী সবার সামনে আমাকে জানান, আমার কলিজা ছিঁড়ে ফেলেছে-আমার পেটে প্রচন্ড ব্যথা। আমাকে অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই ডাক্তার সিজার করেছেন। ব্যথায় চিৎকার দিলে ডাক্তার গুনময় পোদ্দার মুখ চেপে ধরেন এবং হসপিটালের অন্য নার্স ও কর্মচারীগণ হাত পা শক্ত করে ধরে রাখে যেন চিৎকার করতে না পারি। অপারেশনের পর আমার স্ত্রীর শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তার নাজমুল হক সবার সামনে হসপিটালের লোকজনকে বলেন, ‘হাসপাতাল বাঁচাইতে হইলে রোগী ফাতেমাকে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেলে পাঠাইয়া দাও’।
সকল কাগজপত্র নিয়ে আমার স্ত্রীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেয়ার পথে রাত পৌনে নয়টায় আমার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার হাজীগঞ্জ নামক স্থানে মারা যায়।
এ ব্যপারে আমি হসপিটাল কতৃপক্ষকে আমার স্ত্রী চিকিৎসকদের অবহেলায় মৃত্যুবরন করেছে বলে জানালে তারা আমার উপর উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পরে আমাকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে বা মামলা করলে জানে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়।
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নাজমুল হক জানান, অ্যানেস্থেসিয়া তো আমি করিনি-অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়া সিজার করাও সম্ভব না। আর ফাতেমা আক্তার স্ট্রোক করেছেন।
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার গুনময় পোদ্দার জানান, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তো হসপিটাল কতৃপক্ষ আমাকে জানাতো। তারাতো আমাকে বিষয়টি অদ্যাবদি জানায়নি। আর মামলার বিষয়টি আমি লোক মারফতে জেনেছি।
উপশম জেনারেল হাসপাতালের (প্রাঃ) এর চেয়ারম্যান মায়া বেগম জানান, আমি ঢাকায় বসে বিষয়টি জেনেছি। আর যেদিনকার ঘটনা বলা হয়েছে-সেদিন আমি ঢাকায় ছিলাম। হসপিটালের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে নিবো।
রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক জানান, আমরা এ ব্যপারে আদালতের কোন নির্দেশনা পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours