লক্ষ্মীপুরে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে আবুল কাশেম জিহাদীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম হত্যা মামলার প্রধান আসামি। নিজের নামে ‘কাশেম জিহাদী বাহিনী’ গড়ে দুই যুগ ধরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বুধবার (১৭ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাবের সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের ২২ দিন পর এ সিদ্ধান্ত এসেছে।
এর আগে সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভা হয়। সেখানেও কাশেম জিহাদীকে বহিষ্কারের দাবি তোলা হয়। এরপর বহিষ্কারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর অভিযোগ, কাশেম জিহাদি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের মদদপুষ্ট। এর আগে ২০২২ সালে বশিকপুরে যুবলীগ নেতা আলাউদ্দিন হত্যার পর একক সিদ্ধান্তে এমপি নয়ন সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে কাশেম জিহাদীকে সহ-সভাপতি পদে পদোন্নতি দেন।
এ বিষয়ে নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী বলেন, আমরা কোনো সন্ত্রাসীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিই না। ইউপি নির্বাচনের সময় কোন নেতা কাশেম জিহাদীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, শেল্টার দিয়েছেন, সেটা সবারই জানা। এদিকে, গত ২৫ এপ্রিল রাতে খুন হওয়া নোমান জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এরপরও নোমান-রাকিব হত্যার ২২ দিন পার হলেও কাশেম জিহাদীর বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন দায়িত্বশীল আওয়ামী লীগ নেতারা। অবশেষে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মী ও বশিকপুরবাসীসহ সচেতন মহলের চাপের মুখে পড়ে জিহাদীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলো। এজন্য ঢাকা প্রেস ক্লাব ও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধনও করা হয়েছিল।
চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী বলেন, জিহাদীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়। নয়ন এমপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলাম। এখন চিঠি দিয়েছি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নোমান ও রাকিব হত্যা মামলায় কাশেম জিহাদীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। তার কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এতে তাকে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। একইসঙ্গে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, আমি কখনো সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতি করি না। তাদের আশ্রয়-প্রশয় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। সন্ত্রাসী যেই হোক ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে বলা হয়েছে। বিএনপির কিছু নেতা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে লক্ষ্মীপুরকে অশান্ত করছেন। তারা ক্ষমতায় আসার জন্য নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে উসকানি দিয়ে সন্ত্রাস-অপরাধ করাচ্ছেন।
গত ২৫ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দারবাজার এলাকায় জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন রাতে নিহত নোমানের বড় ভাই ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এতে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ জনকে আসামি করা হয়। এদিকে, ১ মে র্যাব-১১ এর নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানিয়েছেন, কাশেম জিহাদী ১৯৯৬ সালে নিজের নামে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন। তার বাহিনীতে ৩০০ সক্রিয় সদস্য রয়েছে। যাদের মাধ্যমে তিনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছেন। কাশেম জিহাদী তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার করে এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
২০১৩ সালে দত্তপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন শামিম, ২০০০ সালে আইনজীবী নুরুল ইসলাম, দত্তপাড়া এলাকার আবু তাহের, বশিকপুরের নন্দীগ্রামের মোরশেদ আলম, করপাড়ার মনির হোসেন, উত্তর জয়পুরের সেলিম ভূঁইয়া ও কামাল হোসেন হত্যা মামলাসহ নোমান-রাকিব হত্যা মামলার প্রধান আসামি কাশেম জিহাদী। তাকে গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান ও তৎপরতা অব্যাহত আছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।