শনিবার, ২৮ মে ২০২২, ০৩:৩৬ অপরাহ্ন
জেড.এইচ.সুমনঃ ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করেনি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার করপাড়া নূরে মদিনা দাখিল মাদ্রাসা সুপার রহমত উল্ল্যাহ।এমনকি প্রতিষ্ঠানে দিবসটিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনি তারা । মাদ্রাসা তালাবদ্ধ করে নিজের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে ছিলেন সুপার। এই ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাসহ উপজেলাব্যাপী ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মাদ্রাসা সুপার রহমত উল্ল্যাহর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সহ বিশিষ্টজনেরা।
২৯ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় সরেজমিনে করপাড়া নূরে মদিনা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় গেলে প্রতিষ্ঠানটির সহকারি সুপার মোশারফ হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আমরা কোন কর্মসূচীর আয়োজন করিনি, আমরা ভুল করেছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৫ মার্চ বিশিষ্টব্যাক্তি ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে ২৫ মার্চ গনহত্যা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা। ২৬ মার্চ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক, পরে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক, চিত্রাংকন ইত্যাদির আয়োজন করা বাধ্যতামূলক।
মাদ্রাসার অফিস সহকারী আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতিবছর ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে দিবসগুলো পালন করা হয়, এবার চাঁদা তোলা হয়নি। তাই দিবস গুলো উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, খেলাধুলা, শিক্ষাঙ্গণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়নি। ২৬ শে মার্চ দুপুরে আমি এসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছি, তাছাড়া মাদ্রাসা সুপার রহমতউল্লাহ নিজের বাড়ি নোয়াখালীতে ছিলেন। সুপারের নির্দেশে মাদ্রাসা বন্ধ রাখা হয়েছে।
নবম ও দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ভর্তির সময় ক্রীড়া বাবদ আমাদের থেকে জনপ্রতি ১ শত টাকা করে নিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমাদের খেলাধুলার ব্যাবস্থা করা হয়নি। স্বাধীনতা দিবসে উপজেলার বিভিন্ন মাদ্রাসায় রচনা প্রতিযোগীতা, চিত্রাঙ্কন, খেলাধুলা হলেও আমাদের মাদ্রাসায় এসব হয়নি।
ইউনিয়ন শ্রমিকলীগ সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম টেলু বলেন, গণহত্যা দিবস এবং মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে
সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা থাকলেও তা করেনি মাদ্রাসার সুপার। এমনকি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি সেদিন।
মাদ্রাসায় না পেয়ে সুপার রহমতউল্লাহর মোবাইল ফোনে ফোন দিয়ে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গণহত্যা দিবস এবং স্বাধীনতা দিবস পালন করে নি তাতে কি হয়েছে। এ ব্যাপারে লিখলে কিছুই হবে না।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবুল হক মজিব বলেন, গত কয়েকদিন থেকেই আমি অসুস্থ থাকায় মাদ্রাসায় যেতে পারিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আলম মনু বলেন, আমরা জীবনবাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও পাকিস্তানের দালালরা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে বসে আছে। আজ তারা স্বাধীনতাকে অস্বীকার করছে। গনহত্যা দিবস এবং স্বাধীনতা দিবস পালনে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে মাদ্রাসা সুপার রহমত উল্ল্যাহ যে দৃষ্ট্রতা দেখিয়েছে,তা মেনে নেয়া যায় না। আমরা মাদ্রাসা সুপার রহমত উল্ল্যাহর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোনাজের রশীদ বলেন, তদন্ত করে প্রতিষ্ঠানটির সুপারের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত লিখুন